২০২৫ সালের আল্টিমেট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি: ফেসবুক অ্যাড নয়, কনটেন্টই রাজা!

২০২৪ সালের শেষে এসে অধিকাংশ উদ্যোক্তা একটি কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছেন— ফেসবুকে অ্যাড রান করেও প্রত্যাশিত সেল আসছে না। অ্যাড খরচ এখন অনেকের কাছেই হতাশার কারণ। Content King এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ ইকরাম জোর দিয়ে বলেছেন, ২০২৫ সালে টিকে থাকতে হলে ফেসবুকের অ্যালগরিদমের উপর মনোযোগ না দিয়ে, মানুষের মনস্তত্ত্ব হ্যাক করা বা মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করার কৌশল শিখতে হবে। 

​১. অ্যাভাটার (Avatar) এবং পেইন পয়েন্ট: সফল কনটেন্টের আঁতুরঘর
​আপনার অ্যাড ক্যাম্পেইনের দায়িত্ব হলো আপনার কপি বা মেসেজকে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। অন্যদিকে, ফেসবুকের দায়িত্ব হলো টার্গেট অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছানো, যা এখন META AI আরও ভালোভাবে পালন করতে পারবে। 

​মার্কেটারের আসল দায়িত্ব:
​পেইন পয়েন্ট আবিষ্কার: অ্যাভাটারের (আপনার আদর্শ ক্রেতা) পেইন পয়েন্টটা পারফেক্টভাবে খুঁজে বের করার জন্য সময় ব্যয় করা।

​আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি: সেই পেইন পয়েন্টের সমাধান দিয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে কনটেন্ট তৈরি করা।
​একটি সফল কনটেন্টের ভিত্তিই হলো, Avatar-এর PainPoint সঠিকভাবে নির্বাচন করা। এর উপর নির্ভর করে একটি কনটেন্টের রিচ কতটা ভালো হবে এবং অ্যাড খরচ কতটা কম লাগবে। 

ভুল প্রক্রিয়া পরিহার: অ্যাডসের টার্গেটিং ঠিক করার জন্য অ্যাভাটার ঠিক করা হয় না। এটি করা হয় শুধুমাত্র কার্যকরী কনটেন্ট তৈরি করার জন্য। এখন যে পেইন পয়েন্টগুলো নিয়ে কাজ হয়েছে, সেগুলোর সমাধান সবাই জানে, তাই নতুন পেইন পয়েন্ট নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করুন।

​২. মানুষকে ‘এক্সপার্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করুন (নিজস্ব অডিয়েন্স তৈরি)
​মানুষ সহজেই কোনো কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, যদি তারা সেই প্রোডাক্টের ব্যাপারে কাউকে ‘বিশেষজ্ঞ’ (Expert) হিসেবে বিশ্বাস করা শুরু করে। 

​সেলসম্যান নন, একজন বিশেষজ্ঞ হোন:


​পরিচয় তৈরি: সেলস পোস্টের বাইরেও সচেতনতা তৈরির জন্য নিয়মিত কনটেন্ট প্ল্যান করুন। এই ধরনের কনটেন্ট দিয়ে একজন সেলসম্যানের বাইরেও আপনার আরেকটা পরিচয় তৈরি হতে হবে—যে আপনি কোনো একটি বিষয়ে অভিজ্ঞ।
​কারণ: মানুষ একজন এক্সপার্টের কাছ থেকেই প্রোডাক্ট কিনতে বেশি আগ্রহী হয়। ২০২৫ সালে এই কাজটি ছাড়া অনলাইনে ভালো করা সম্ভব নয়।

এক্সপার্টের ধরন
উদাহরণ (বিক্রেতার ভূমিকা)
প্রয়োগিক এক্সপার্ট (Practical Expert)
মশলার জন্য: শেফ বা রাঁধুনী (রেসিপি বিশেষজ্ঞ)।
ড্রেসের জন্য: ফ্যাশন ডিজাইনার/ফ্যাশন আইকন (স্টাইল বিশেষজ্ঞ)।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পণ্যের জন্য: ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ)।

​গুরুত্বপূর্ণ টিপস: আপনি মশলা বা সরিষার তেল বিক্রি করলে, আপনার পেজকে এমনভাবে তৈরি করুন যাতে মানুষ রান্নার রেসিপি, টিপস জানতে আপনার কাছে ভিজিট করে। মধু বা স্বাস্থ্যকর সামগ্রী বিক্রি করলে, মানুষ যেন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারের জন্য আপনার পেজ ব্যবহার করে।

​৩. ল্যান্ডিং পেইজ অপটিমাইজেশন: কনভার্সন গ্যারান্টি
​আপনার মার্কেটিং প্রচেষ্টা যেন ল্যান্ডিং পেইজে এসে ব্যর্থ না হয়, সেদিকে বিশেষ যত্নবান হন। 

​তথ্য নিয়ন্ত্রণ: গ্রাহককে কিনতে উৎসাহিত করার জন্য যতটুকু তথ্য দরকার, তার অতিরিক্ত কনটেন্ট দিয়ে ল্যান্ডিং পেইজকে সাজালে কোনো লাভ নেই।

​ডিজাইন ভিন্নতা: একই ধরনের না করে, একটু ভিন্ন টাইপ ল্যান্ডিং পেইজ তৈরি করতে পারলে প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারবেন।

​লোডিং গতি: ওয়েবসাইট লোডিং টাইম যেন ৩ সেকেন্ডের বেশি না হয়। গুগল রিপোর্ট অনুযায়ী, লোডিং টাইম ৩ সেকেন্ডের বেশি হলে ৬৭% কাস্টমার বাউন্স করে।

​ইউজার ফ্রেন্ডলি চেকাউট: সহজে অর্ডার করতে না পেরে অনেকেই চলে যায়। এই চলে যাওয়া নাম্বারকে সেলে কনভার্ট করতে চাইলে ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং ইজি অর্ডার চেকাউট প্রসেস সিস্টেম রাখতে হবে।

​৪. ক্রিয়েটিভ হুক পয়েন্ট এবং ‘তৃতীয় চোখ’ হ্যাকিং
​বর্তমান প্রজন্ম, বিশেষ করে Gen Z-এর মন জয় করতে হলে আপনাকে ক্রিয়েটিভিটি দেখাতে হবে। 

​ক. এনগেজিং কনটেন্ট এবং হুক পয়েন্ট
​ভিডিওর প্রথম ৫-১০% অংশই হলো হুক পয়েন্ট। এই অংশ দেখেই মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়, ভিডিওটি তাদের জন্য তৈরি হয়েছে কি না। 
​এনগেজমেন্ট তৈরি: কনটেন্ট এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে মানুষ এনগেজ হতে বাধ্য হয়। মানুষের রিয়েল লাইফের ইমোশন, ফানি টাইপ বা সমসাময়িক ঘটনার সাথে কানেক্ট করে আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করুন।

​ক্যারেক্টার ব্যবহার: ভিডিওতে ব্যবহৃত চরিত্র বা ক্যারেক্টার দিয়েও মানুষকে এনগেজ হতে বাধ্য করতে পারেন।

​বিস্তৃত অডিয়েন্স টার্গেট: শুধুমাত্র সরিষার তেল ব্যবহারকারীদের জন্য কনটেন্ট তৈরি না করে, সকল রাঁধুনিকে টার্গেট করে মজাদার রেসিপির ভিডিও তৈরি করুন। এরপর ভিডিওর ভেতরে আপনার সরিষার তেল ব্যবহার করুন এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরুন। এতে সয়াবিন তেল ব্যবহারকারীরাও সরিষার তেল ব্যবহারকারী হয়ে উঠতে পারে।

​খ. কাস্টমারের ‘তৃতীয় চোখ’ (Logic Part) ঘুম পাড়ানো
​আপনার কনটেন্ট যদি সম্ভাব্য কাস্টমারের তৃতীয় চোখকে (যুক্তি অংশ) জাগ্রত করে দেয়, তাহলে সেলস কনভার্সন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। 
​যুক্তি-জাগানো কনটেন্ট (এড়িয়ে চলুন): মশলা কতটা বিশুদ্ধ, কীভাবে তৈরি হচ্ছে, বা প্রিমিয়াম আইটেম দেখানোর ভিডিও।
কনটেন্ট (ব্যবহার করুন): ইমোশনাল, মোটিভেশনাল, বা মুখরোচক টাইপ কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমন: আপনার মশলা দিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরির লোভ দেখানো বা ‘১ মাসে ৫ কেজি ওজন কমানোর টিপস’ দিয়ে ঘি, মধু, বা তেল বিক্রির কনটেন্ট।

​৫. কনটেন্টে বৈচিত্র্য আনুন: মনকে ট্র‍্যাক করুন
​একটি ব্যবসার সেলস বৃদ্ধিতে অডিয়েন্সকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে যে কনটেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, সেই কনটেন্টগুলোতে সব সময় যেন অনেক ভ্যারিয়েশন থাকে। একই টাইপ কনটেন্ট দিয়ে অডিয়েন্সের ব্রেইনকে ট্র্যাক করতে পারবেন না। 

​কনটেন্ট মিক্স: আপনার মাসিক কনটেন্ট ক্যালেন্ডারকে নিম্নলিখিত সব ধরনের কনটেন্ট দিয়ে সাজাতে হবে: 

​ফানি কনটেন্ট
​ইমোশনাল কনটেন্ট
​এডুকেশনাল কনটেন্ট
​স্টোরি টেলিং কনটেন্ট
​ইমেজ কনটেন্ট, বড় ভিডিও কনটেন্ট, ছোট কনটেন্ট

​চূড়ান্ত পরামর্শ
​উপরে দেওয়া এই ৫টি পয়েন্টের ব্যাপারে সচেতন না হয়ে শুধু টার্গেটিং ঠিক করার উপর নির্ভর করে থাকলে, ২০২৫ সাল আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শেষ বছর হতে চলেছে। 

​মনে রাখবেন, মার্কেটিং আবার সেই দিকেই এগোচ্ছে, যেখানে এটি অর্থনীতি এবং মানুষের সাইকোলজিকে ব্যবহার করে তৈরি হয়েছিল। কাস্টমারদের ডিসিশন মেকিং প্রসেসের Kick Start যত ভালো বুঝবেন, এবং কাস্টমার জার্নির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ Touch Pointsগুলো যত ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন, তত ভালোভাবে সেলস স্ট্র্যাটেজি পরিকল্পনা করতে পারবেন।

সম্পন্ন বইটা পড়তে বা ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

Download now

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *